রিমোট কন্ট্রোল যুদ্ধবিমান বানিয়ে তাক লাগালো রোশান
সুলতান মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪, ১৭:২১ আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৪, ১৯:১১
রিমোট কন্ট্রোল যুদ্ধ বিমান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে রোশান চৌধুরী নামে দিনাজপুরের এক কিশোর। সম্প্রতি যুদ্ধ বিমানটি পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করা হয়েছে। দিনাজপুর গোর এ শহীদ বড় ময়দানে রোশানের তৈরি যুদ্ধ বিমানটি উড্ডয়ন করার সময় দেখার জন্য অনেক দর্শনাথী ভিড় করেন। রোশান চৌধুরী জেলা সদর উপজেলার বাহাদুর বাজার এলাকার মো. মইনুল চৌধুরীর ছেলে। তিনি দিনাজপুর সাউথ পয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্র।
রোশান চৌধুরীর আবিষ্কৃত ছোট্ট জেড বিমানের ওজন ১৫০০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৫৪ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৪২ ইঞ্চি। বিমানটিতে ডেপ্রোন শীট, সার্ভো , ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিপো ব্যাটারি, ইএসসি, ইডিএফ মোটর ব্যবহার করা হয়েছে। মোটরের স্পিড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরও ৪টি ইলেকট্রিক সারভো মোটর যোগ করা হয়। বিমানটি দেড় কিলোমিটার রেঞ্জ পর্যন্ত চলতে পারবে। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করলে রেঞ্জ আরও বাড়ানো সম্ভব।
রিমোট কন্ট্রোল যুদ্ধ বিমান তৈরির কারিগর রোশান চৌধুরী বলেন, আমি এর আগে রোবট তৈরি করেছি। মার্স রোভার, আরডুইনো প্রজেক্ট আছে অনেকগুলো। এটা আমার অন্যতম একটা প্রজেক্ট। এর আগে আমি ইউটিউব দেখে বানিয়েছিলাম কিন্তু এটা পুরাটাই আমার ডিজাইন করা। এটা বানাতে আমার খরচ হয়েছে বিশ হাজার টাকা। আসলে এই প্রজেক্টগুলো বানাতে অনেক খরচ পড়ে যেটা একজনের পক্ষে অবশ্যই সম্ভব না। সেই জন্য আমাকে যদি সরকার সাহায্য করে তাহলে অবশ্যই অনেক কিছু বানাতে পারবো। আমাদের দেশের সরকার যদি চায় তাহলে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বিমান তৈরি করতে পারব।
রোশান চৌধুরীর বাবা মইনুল চৌধুরী ও মা রাশিদা চৌধুরী বলেন, রোশান আমাদের দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে ছোট। ছোটবেলা থেকেই রোশানের নতুন কিছু তৈরি করার আগ্রহ ছিল। ছোটবেলায় খেলনা কিনে দিলেই, বাড়ি এসে সেই খেলনা খুলে নতুন করে তৈরি করাই ছিল তার নেশা। করোনাকালীন স্কুল বন্ধ থাকায় সেই সময়ে চাঁদে পাঠানো মার্স রোবট তৈরি করেছিল। তার মধ্যে নতুন কিছু তৈরির নেশা রয়েছে। আমরা রোশানকে সব সময় সাপোর্ট করছি। সরকার যদি আমার ছেলের এই প্রতিভাকে কাজে লাগায় তাহলে আমরাও মা-বাবা হিসাবে গর্ববোধ করব।
রোশান চৌধুরী বন্ধু আবু হুরায়রা বলেন, রোশান ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুবই মনযোগী। সে যেমনি পড়াশুনা করে, তেমনি টেকনোলোজির প্রতি তার আগ্রহ। আমরা বন্ধু হিসেবে তাকে সব সময় সাপোর্ট করি। এই যুদ্ধ বিমান তৈরি করা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।
রোশানের বন্ধুর সজল বলেন, রোশান অত্যন্ত মেধাবি। সে সব দিকে পারদর্শী। সরকারের সহযোগিতা সে যদি পায়, তাহলে আমার মনে হয়, আমরা বিদেশ থেকে অনেক যুদ্ধ বিমান নিয়ে আসি বাংলাদেশে সেটা আর মনে হয় প্রয়োজন পড়বে।
দর্শনার্থী মজিবুর রহমান বলেন, রোশানের রিমোট কন্ট্রোল যুদ্ধ বিমানটি মাঠে এসে দেখলাম। সত্যি এটা অবাক করার মতো জিনিস। আমরা আজকে বিমান ওড়ানো দেখলাম। আমাদের দেশে আসলে অনেক প্রতিভাবান মানুষ আছে। আমরা আশা করছি সরকার যদি এগিয়ে আসে আমাদের বাচ্চারা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তারা অনেক কিছু করতে পারবে। আমাদের দেশও অনেক এগিয়ে যাবে।
দিনাজপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীরা অনেক প্রতিভাবান। অনেক প্রযুক্তি নিরর্ভশীল। দিনাজপুরের রোশান একটি যুদ্ধ বিমান তৈরি করেছেন। যা দিনাজপুর বড় মাঠে উড্ডয়ন করা হচ্ছে, সত্যি এটি প্রশংসার বিষয়। রোশান চৌধুরীর এই মেধার মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। রোশান চৌধুরী ও তার পরিবার যদি সরকারিভাবে সহযোগিতা চায় অবশ্যই সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, রোশান মেধাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিমান তৈরি করতে পারবে তখন আর আমাদের বিদেশ থেকে যুদ্ধ বিমান নিয়ে আসতে হবে না।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি